গল্পের পাতা
গোলমাল !
সেদিন ভোরবেলা এক অবাক করা ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো জয়ন্তর,
গার্গী বললো জয়ন্ত সুপ্রভাত,
জয়ন্ত বললো হাঁ সুপ্রভাত, বলো কি খবর?
এতো সকালে ফোন করলে?
গার্গী বললো জয়ন্ত আমি প্রেগনেন্ট .
জয়ন্ত বললো বা সে তো খুব ভালো খবর,
গার্গী আবার বললো জয়ন্ত আমি pregnent,
জয়ন্ত বলল congratulations ,
গার্গী বলল আমি কী বলছি তুমি কী বুঝতে পারছ?
জয়ন্ত বলল কেন? না বোঝার মত কিছু তো বলনি,
শুধু শুধু কাঁচা ঘুম টাকে কেনো চটকাচ্ছ ,বললাম তো খুব ভালো খবর.
গার্গী বলল আমার পেটে তোমার সন্তান জয়ন্ত .
জয়ন্ত এবার বিছানা থেকে ধড়পড় করে উঠে বসলো ,
সে বুঝতে পারছে না সে জেগে আছে, না স্বপ্ন দেখছে,
বলল, কী বলছ কী, আমার সন্তান মানে,
গার্গী বলল তোমার সন্তান মানে তোমার আমার সন্তান ,
জয়ন্ত বলল তুমি কি স্বপ্ন দেখছিলে? তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
নাহলে কোথাও কিছু নেই, হঠাৎ করে আমি কোথা থেকে তোমার সন্তান এর বাবা হয়ে গেলাম ,
ইয়ার্কি মারছ মারো কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে ,কিন্ত সেটার ও তো একটা লজিক থাকবে নাকি,
একটা তো লিমিট রাখো ,3-4 মাস হয়ে গেলো তোমার সাথে লাস্ট দেখা,
গার্গী বলল ওটাই তো বলছি, আমাদের লাস্ট দেখা টা তোমার মনে আছে?
জয়ন্ত বলল কেনো মনে থাকবে না,সুরজিৎ এর প্রমোশন এর পার্টিতে.
গার্গী বললো সেই পার্টি তে আমরা সবাই খুব ড্রিংক করেছিলাম , তোমার মনে আছে?
অভীক (আমার স্বামী )ও ড্রিংক করে বেহুস ছিল, তুমি ও তো রাম, ভদকা,bear সব খেয়েছিলে, কিন্তু তুমি তো অনেক খেয়েও স্টেডি থাকতে পারো, তাই পার্টি শেষ করে তুমি তোমার গাড়িতে করে আমাদের পৌঁছে দিতে আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে এসেছিলে,
জয়ন্ত বলল হ্যাঁ তো কী হয়েছে? তোমাদের পৌঁছে দিয়ে কী আমি অন্যায় করেছি, তোমাদের পৌঁছে দিয়ে আমি ভোরে বাড়ি ফিরে পড়েছিলাম।
গার্গী বলল সেদিন তুমি যাবার আগে কী হয়েছিল মনে আছে? সেদিন নেশার ঘোরে…
জয়ন্ত অবাক হয়ে বললো কী হয়েছিল?
গার্গী বলল সেদিন তুমি আমার সাথেই শুয়ে পড়েছিলে,
কারন অভীক সেদিন good night বলে পাশের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল,
জয়ন্ত বলল তোমার কী মাথা খারাপ হয়েছে?
আমি তোমার সাথে কেন শুতে যাবো ?
তুমি অভিক এর সাথেই শুয়েছিলে .
আমি তোমাদের পাশের ঘরে ডিভান এ একটু রেস্ট করছিলাম. ভোর হতেই বেরিয়ে এসেছিলাম.
আর তুমি যে প্রেগনেন্ট কি করে জানলে?
অভিক কে বলেছ?
গার্গী বলল, তুমি কি বলছো? অভিক জানতে পারলে কী হবে জানো? আর অমি অভিক এর গায়ের গন্ধ চিনি,
তোমাকে শুধু শুধু বিব্রত করার জন্য আমি ফোন টা করিনি, যা সত্যি শুধু সেই টুকু বলতেই ফোন করেছিলাম, আমি প্রথম থেকেই জানতাম, কিন্তু ভেবেছিলাম হয়ত কিছু হবে না, অনেক সময়ই তো মিশ হয়, কিছুই হয় না, তাই তোমায় embaras situation এ ফেলতে চাইনি, তবে এমন অপমানিত হবো জানলে কলটা করতাম না,আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি Dr. সেন র কাছে
গেছিলাম, উনি আমার খুব পরিচিত,ওনাকে পুরো ঘটনাটা বললাম,উনিও বিশ্বাস করছিলেন না, তারপর USG করতে দিলেন, তারপর রিপোর্ট দেখে উনি সিরিয়াস হয়ে গেলেন,
বললেন হ্যাঁ তুমি pregnent. বললেন কি decession নেবে জানিও, সেই অনুযায়ী আমি মেডিসিন স্টার্ট করবো,
আমি কি করবো জয়ন্ত!
জয়ন্ত বললো আরে অভীক কে এই ভালো খবর টা দাও, ওহ খুব খুশি হবে,
গার্গী বলল, অভীক জানতে পারলে ও আমায ছেড়ে চলে যাবে জয়ন্ত, আমি তো ওকে চিনি,
সেই দিনের পর অভীক ও মাস দুয়েক এর জন্য কাজে বাইরে গেছিলো তুমিও জানো.ওহ বিশ্বাস ই করবে না, যে এটা ওর সন্তান. আমি কি করবো জয়ন্ত?
জয়ন্ত এবার একটু চুপচাপ হয়ে গেলো,
ফোন টা রাখছি এখন বলে কল টা কেটে দিলো,
ভাবতে শুরু করলো তাহলে কি সেদিন সত্যি সত্যি আমি গার্গীর সাথে এক ই বিছানায় রাত …! যদি সত্যি হয় তাহলে কি হবে? গার্গী মিথ্যে বলার মেয়েও নয় সেটা সত্যি, আর যদি মিথ্যেও বলে কি করে প্রুফ করব যে সেদিন আমি পাশের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!
উল্টো পাল্টা ভাবনায় জয়ন্ত র ঘুম উবে গেল, সে ঘরে পায়চারি করতে লাগলো হাতে সিগারেট নিয়ে, আর মনে মনে ভাবতে লাগলো তাহলে কি হবে এখন?সত্যি কী….!!!
সেদিন অনেক মদ খেয়েছিলাম আমি এটা তো সত্যি, কিন্ত….
গার্গী নাহয় আমাকে খুব পছন্দ করে,মনে মনে ভালও বাসে, কিন্ত আমি তো কখনো
গার্গী কে ওরকম ভাবে ভাবিনি …..তবে কি গার্গী যা বলছে সেটা সত্যি…
অভিক যদি জানতে পারে, খুব ছোট হয়ে যাবো আমি,
অভীক আমার এতো কাছের বন্ধু,এতসত ভাবতে ভাবতে,
জয়ন্ত আশীষ কে ফোন করে বললো তুই immediately একবার রাজারহাট এ আমার ফ্ল্যাট এ আয়, খুব দরকার আছে, ফ্ল্যাট আমি একাই আছি , খানিক পরে সুরজিৎ কেও ডেকে নিল জয়ন্ত,
আশীষ, সুরজিৎ যথারীতি তাড়াতাড়ি করে জয়ন্তর ফ্লাট এ হাজির হলো, আশীষ বললো কি হয়েছে রে, সকাল বেলাএত urgent ডেকে পাঠালি,
জয়ন্ত এঘর ওঘর পায়চারি করে চলেছে সিগারেট হাতে নিয়ে, সুরজিৎ বললো কি হয়েছে রে জয়ন্ত serious কিছু, অফিস এ কোনো গোলমাল, কেউ ফাঁসিয়ে দিয়েছে?
মেয়ে ঠিক আছে? শ্বেতার সাথে কোনো ঝামেলা?
কিছুই বলছে না জয়ন্ত, আশীষ বললো কি হয়েছে সেটা তো বলবি,
জয়ন্ত বললো একটা বাজে বিষয়ে জড়িয়ে গেছি, সত্যি মিথ্যে কিছু বুঝতে পারছি না, মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,আশীষ বললো বলবি তো কি হয়েছে?
তারপর পুরো বিষয় টা জয়ন্ত খুলে বললো, সিগারেট এর পর সিগারেট জ্বলছে, সবাই একদম নিস্তব্ধ,কে কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না,
খানিক পরে নীরবতা ভেঙে আশীষ বললো জয়ন্ত তুই চিন্তা করিস না,
এটা গার্গী ইচ্ছা করে তোকে ফাঁসাতে চাইছে,সুরজিৎ বললো গার্গী আর যাই হোক
ফাঁসানোর মেয়ে নয় আশীষ,জয়ন্ত তোর ভালো করে মনে আছে রে সেদিনের রাত এর পুরো ঘটনা, সজ্ঞানে তুই কিছু করবি না এ বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই,
কিন্তু এত ড্রিঙ্ক করে কি কিছু… ভুলবশত…
আশীষ বললো .কি ভুলভাল বলছিস, জয়ন্ত এ কাজ করতেই পারে না, আমার মনেহয় জয়ন্ত র অভীক এর সাথে কথা বলা উচিত, কারন অভিক ওর খুব ভালো বন্ধু,
আমাদের ও খুব ভালো বন্ধু, তবু দুজনে আলোচনা করলে নিশ্চই সত্যি টা জানতে পারবি,
সুরজিৎ বললো আরে কি ভুলভাল বলছিস,অভিক তো জানেই না ,
গার্গী তাই তো বলেছে জয়ন্ত কে,
আশীষ বললো তবে গার্গী কিন্ত তোকে খুব ভালোবাসে,
জয়ন্ত বললো ছাড়তো তোর কথা,
ভালোবাসে বলে অমি কি এই সব করবো তোর মনে হয়,
কি যে বলিস,আমার মাথা কাজ করছে না …
আজ না হয় কাল তো অভীক জানবেই যে গার্গী প্রেগনেন্ট, ওহ যদি সত্যি সত্যি ভাবে যে এটা ওর বাচ্চা নয়, তাহলে কী হবে, ওদের এত ভালো বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক সব নষ্ট হয়ে যাবে? নাকি অভীক খুব খুশি হবে যে, হয়তো ওর মেয়ে হবে, ওহ এত মেয়ে ভালোবাসে যে আমার, সুরজিৎ এর মেয়েকেও খুব আদর করে, স্নেহ করে নিজের মেয়ের মতো করে, ওহ হয়তো সত্যি ভাববে যে গার্গী ওর সন্তান এরই মা হতে চলেছে, গার্গী কি এর জন্যই চাকরি ছেড়েছে !!, হয়তো শুধু শুধুই আমি চিন্তা করছি,
আশিষ বললো সালা এইজন্য বলি মদ খাস না,.. খাস না.
এই সব সাত পাঁচ যখন আলোচনা চলছে, তখন অভীক কল করলো জয়ন্তর ফোন এ,
জয়ন্ত তো প্রথম টায় ভাবল ফোনটা ধরবো কি ধরবোনা, তারপর কল টা রিসিভ করেই নিল,
ফোনের স্পিকারটা অন করে দিল,
অভীক বললো জয়ন্ত তুই কোথায় আছিস, জয়ন্ত বললো আমি তো বাড়িতে,
বললো immediately তোকে একবার আমার বাড়ি আসতে হবে আজ সন্ধেবেলা,
খুব দরকার তোকে, জয়ন্ত বললো না রে আজ হবে না,
অভীক নাছোড়বান্দা, বললো তোকে আজ আসতেই হবে, খুব দরকার আছে আমার,
একটা বিষয়ে তোর সাথে একটু আলোচনা করার আছে,
জয়ন্ত বললো কি বিষয় বলনা, বললো না তুই আয় তারপর বলবো, গার্গী আজ বাড়ি নেই,
অবশ্যই আসবি কিন্ত বলে ফোনটা রেখে দিল,
জয়ন্ত কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, আশীষ, সুরজিৎ সব চুপ করে শুনলো, তারাও পুরো confused যে অভীক শুধু জয়ন্তকেই কেনো ডাকলো, তবে কী ও কিছু সন্দেহ করেছে? গার্গী নেই বলে ডাকার কি আছে?
কিন্ত অভীক আর যাই হোক জয়ন্ত কে সন্দেহ করবে এটা তো সম্ভব ই না,
তাহলে কেন ডাকলো এতো urgent !!!
জয়ন্ত বললো আশীষ তুই একবার গার্গী কে ফোন কর, এমনি কথা বল, দেখ যদি কিছু বুঝতে পারিস,
এদিকে জয়ন্ত র অফিস যাওয়া,আশীষ এর দোকান এ যাওয়া সব মাথায় উঠেছে, সুরজিৎ নাহয় ছুটি নিয়েছে অসুস্থ বলে,
এদিকে জয়ন্তকে শ্বেতা ফোন করছে বারবার তুমি কোথায়, অফিস যাবেনা আজ , জয়ন্ত বললো একটু কাজ এ আছি, তোমায় পরে ফোন করছি বলে কল টা কেটে দিলো,
জয়ন্ত ভাবতে শুরু করলো শ্বেতা যদি by chance জানতে পারে তাহলে কী হবে, সে তো আগাগোড়া কিছু বুঝবে না, বলবে তুমি তো সেদিন অভীক এর ওখানেই ছিলে,
জয়ন্ত তুমি কি করেছ!!!! তুমি এটা করতে পারলে?তোমার মেয়ে বড় হচ্ছে ,
জয়ন্ত ভাবছে সালা এতো মহা ফ্যাসাদে পড়লাম,
সেদিন নেশার চক্করে সত্যি কী হয়েছিল, সব গুলিয়ে যাচ্ছে,
দিদি যদি জানতে পারে তাহলে তো হয়েই গেলো, সে বলবে মা দেখো অভীক নাকি ওর প্রাণের বন্ধু, অভীক এর কথা শুনে ওহ আমার সাথে ঝামেলা করে,আর তার wife গার্গী নাকি এইভাবে ভাই কে ফাঁসানোর জন্যও উঠে পড়ে লেগেছে, কি মেয়ে সত্যি গার্গী, কোথায় কি করে এসেছে কে জানে, এখন ভাই এর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে, ভাই এর property র প্রতি ওদের নজর আছে, আমি তো আগেই এটা বুঝেছিলাম, নাহলে এতো সাপোর্ট ভাই কে কেনো করবে সবসময়,
সুরজিৎ বললো আরে এতো কিছু এখন ই ভাবিস না
যা হবে দেখে নেবো সবাই মিলে, অভীক, গার্গী তো আমাদেরই বন্ধু, shortout করে নেবো ঠিক,
আশীষ বললো চল একটু চা খেয়ে আসি বাইরে,
তারপর দেখছি কি করা যায়..
চা খেয়ে ultimately সবাই যে যার বাড়ি চলে গেলো, আশীষ দোকানে চলে গেল.
কোনো সমাধান বেরোলো না.
জয়ন্ত যাবে কি যাবে না করে সন্ধেবেলা অভীক এর বাড়ি হাজির হলো,
অভীক তো খুব খুশি জয়ন্তকে দেখে,
বললো thank you for coming জয়ন্ত.
জয়ন্ত তো ভিতরে ভিতরে ভাবছে যে সত্যি কি অভীক কিছুই জানে না, তাহলে আমাকে আজ ডাকলোই বা কেন ?
অভীক বললো রাতে কিন্তু আজ ফিরতে পারবি না, আজ গার্গী ও নেই, সারারাত আড্ডা হবে.
জয়ন্ত না থাকতে চাইলেও অভীক এর সাথে পেরে উঠবেনা ভেবে চুপ করে রইলো,
জয়ন্ত মুভি দেখতে ভালোবাসে তাই অভীক ডিভান টা খুলে,Tv চালিয়ে, remort টা জয়ন্ত র হাতে দিয়ে দিল.
অভীক বললো রাতে রেড ওয়াইন খাবি??
জয়ন্ত কী বলবে বুঝতে পারছে না, ভাবছে সালা সেদিন ড্রিঙ্ক করেই যতো গন্ডগোল হয়েছে তবু বললো ঠিক আছে আনা,খানিক পরে অভীক বেরিয়ে নিজেই Red Wine নিয়ে হাজির হলো.
এদিকে জয়ন্ত যে এতো মুভি দেখতে ভালোবাসে, সে আজ মুভিতে concentrate করতে পারছে না,
অভীক red wine দুটো গ্লাস এ ভরে, কিছু স্নাক্স নিয়ে বসলো জয়ন্ত র পাশে.
জয়ন্ত বললো এবার তো বল ডাকলি কেন আজ হঠাৎ করে,
অভীক বললো আরে গার্গী র কি হয়েছে কে জানে,খুব আনমনা হয়ে আছে কদিন ধরেই, কিছু খাচ্ছেও না ঠিক করে,কি হয়েছে কিছু বলছেও না, সালা কিছু বুঝতেও পারছি না, সেই নিয়ে আমিও খুব disturb আছি, তাই ভাবলাম যদি তুই আশিষ একটু আলোচনা করবো, কারন গার্গী ও আজ বাবার ওখানে গেছে বাবা অসুস্থ বলে, বলে গেছে এখন নাকি ওখানেই থাকবে, কবে ফিরবে পরে জানাবে.
জয়ন্ত তো সিগারেট এর পর সিগারেট এ টান মেরে চলেছে, ওহ তো কি বলবে কিছু বুঝেই উঠতে পারছে না,
তবু বললো একদিন গার্গী কে নিয়ে কোথাও ঘুরে আয় দেখ মুড ঠিক হলে নিশ্চই বলবে তোকে,
অভীক বললো তবে কি ও আমার গার্লফ্রেন্ড আছে বলে ওহ insecured ফিল করছে, কিন্তু সেরকম তো হবার কথা নয়, ওহ তো ভালই জানে ওর জায়গাটা এত নড়বড়ে নয়,
তাহলে কেন গার্গী হঠাৎ ……
জয়ন্ত মনে মনে ভাবছে তাহলে কি গার্গী যা বললো সেটা সত্যি, নাহলে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ বলছে, কিছু খেতে পারছে না বলছে, অভীক ও তো কিছুই জানেনা দেখছি,
বাড়িতে এসি চলছে তবু জয়ন্ত র ঘাম ছুটতে শুরু করলো, ভাবতে লাগলো, তাহলে কি অভীক কে এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে, যদিও অভীক ও এটা বিশ্বাস করবে না যে গার্গী র পেটে আমার সন্তান, তবে কী গার্গী সেদিন hallucination করে নিয়েছে যে অভীক এর জায়গায় আমি ছিলাম,
এতসতো ভাবতে ভাবতে জয়ন্ত সাহস নিয়ে বললো,অভীক তোর সুরজিৎ এর পার্টি র কথা মনে আছে?
অভীক বললো কেনো মনে থাকবে না, সেদিন যা মদ খেয়েছিলাম সত্যি, পুরো টাল খেয়ে গেছিলাম, তুই তো মনেহয় আমাদের পৌঁছে দিয়েছিলি?
জয়ন্ত বললো সালা সেটাও তোর মনে নেই? আমি ই তো তোদের পৌঁছে দিয়ে ভোরে বাড়ি ফিরেছিলাম, আমি তো সেদিন তোর পাশের ঘরে ডিভান এ শুয়ে পড়েছিলাম,
অভীক বললো হাঁ হাঁ তাই হবে হয়তো, সালা ভূলেই গেছি দেখ, আমি সেদিন কোথায় শুয়েছিলাম জয়ন্ত? তোর মনে আছে?
জয়ন্ত বললো তুই তো তোর বৌ এর সাথেই মনেহয় শুয়ে পড়েছিলি, অভীক বললো না তো রে, আমি তো পাশের ঘরে মনেহয় শুয়েছিলাম, এসব শুনে জয়ন্ত র মুখ আরও শুকিয়ে গেলো, এতো দেখছি অভীক কিছুই ঠিক করে বলতে পারছে না,যদি সত্যি সত্যি কিছু ঘটে থাকে তাহলে কি হবে! কি করবো তাহলে! এতো দিনের বন্ধুত্ব…
হাজার দুশ্চিন্তা ভিড় করতে শুরু করলো জয়ন্ত র মাথায় ..
অভীক বললো রাত এ কি গ্রেভি এগ চিকেন চাউমিন অর্ডার দেবো? জয়ন্ত বললো আমার খিদে নেই রে, যা অর্ডার দিবি অল্প করে দিস,
এমন সময় হঠাৎ কলিং বেল বাজলো, অভীক বললো জয়ন্ত দেখতো কে এসেছে, জয়ন্ত গেট খুলে দেখে আশীষ, সুরজিৎ এসে হাজির,
অভীক বললো কে এসেছে রে? জয়ন্ত বলার আগেই ঘরে ঢুকে পড়লো আশীষ, সুরজিৎ,
অভীক বললো বা ভালই করেছিস চলে এসেছিস, আজ থেকে যা তোরাও, আড্ডা হবে,
আশীষ বললো তুই কি ভাবলি নিজেরাই আড্ডা দিবি আমরা কিছু জানবো না,
আমাদের ডাকবি না বলে আমরা আসবো না, আজ তোর পুরো ধংস করবো,
সুরজিৎ ভাবছে তাহলে তো সত্যি সত্যিই অভীক কিছু জানে না !
অভীক বললো না রে কিছুদিন ধরেই দেখছি গার্গী একটু চুপচাপ, শরীর টাও ভালো না, ঠিক মতো খাচ্ছে ও না, কি হয়েছে কিছু বুঝতেও পারছি না, তাই ভাবলাম দেখি জয়ন্ত যদি আসে, তাহলে একটু কথা বলা যাবে এ বিষয়ে,
তাই জয়ন্ত কে একটু ডেকে পাঠিয়ে ছিলাম.
এই সব কথোপকথন এর মধ্যেই আবার কলিংবেল বাজলো,
অভীক বললো দেখত জয়ন্ত , এখন আবার কে এলো, জয়ন্ত গেট খুলতেই দেখতে পেলো গার্গী খাবার এর প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে বাইরে,
গার্গী বললো জয়ন্ত গেট টা খোলো খুব খিদে পেয়েছে তো? জয়ন্ত কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না, আরও ঘাবড়ে গেছে, যদি অভীক এর সামনে কিছু বলে বসে,
জয়ন্ত বললো আমরা যে আসবো তুমি জানতে?
গার্গী বললো কেন জানবো না,আশীষ তো কল করেছিল,
ওর মুখেই শুনলাম তুমি আজ সন্ধেবেলা আসছো আমাদের এখানে, তখন আমি আশীষ কে বললাম তুই ও চলে আয় সুরজিৎ কে নিয়ে , আমার কিছু কথা বলার আছে তোদের সাথে,আসবি কিন্ত অবশ্যই,
অভীক বললো তুমি যে বললে আজ বাবার ওখানেই থাকবে, গার্গী বললো আমি আসতাম না, আশীষ বললো তুই থাকলে তাহলে আমরা আসবো, তাই চলে এলাম,
জয়ন্ত ভাবছে সালা আশীষ যে গার্গী কে ফোন করেছিলো আশীষ তো আমায় কিছু বললো না!
কেন কিছু বললো না ? আশীষ কি কথা বললো গার্গীর সাথে!! আশীষ কে যদি গার্গী কিছু বলে থাকে, তাহলে সুরজিৎ ও তো নিশ্চই জেনেছে, কারন ওরা তো একসাথেই এলো এখানে, তাহলে সুরজিৎই বা কেনো আমায় কিছু বললো না, তবে কী গার্গী ওদের ওই একই কথা বুঝিয়েছে! তাই এই নিয়ে ওরা কিছু বলতে চায়নি,
জয়ন্তর আরও মেজাজ খারাপ হতে শুরু করল ,
ভাবতে লাগলো ওরা কেন আমায় কিছু বললো না, তাহলে কী ওরাও বিশ্বাস করছে যে এই ঘটনাটা সত্যি!
গার্গী বললো চলো সবাই আগে খেয়ে নিই,গার্গী অভীক মিলে খাবার রেডি করতে গেলো,
জয়ন্ত বললো আমার খুব একটা খিদে নেই,গার্গী বললো যা খাবার এনেছি,দেখলেই খিদে পেয়ে যাবে,
Special Chinese khabar,
গার্গী বললো আজ যেন কত তারিখ জয়ন্ত ??
জয়ন্ত বললো আমি জানি না,
গার্গী বললো এপ্রিল ফুল জয়ন্ত,
জয়ন্ত ভাবছে তাহলে কি গার্গী April Full করার জন্য আমায় এই সব গল্প দিয়েছে!! নাকি… অভীক বললো জয়ন্ত, গার্গী যা ভাবছে সেটা কি সত্যি?
জয়ন্ত বললো অভীক তুই বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি,
অভীক বললো তুই কি বলছিস! কি করবি তুই?
জয়ন্ত বলতে চেষ্টা করলো তুই বিশ্বাস কর অভীক,আমি এসব কিছু করিনি,
অভীক বললো আরে তুই কেন কিছু করবি, এসব তো আমি আর গার্গী মিলে প্ল্যান করে….
এই সব arrangement করেছি,
সবাই মিলে চিৎকার করে বলে উঠলো
Happy happy April full Jayanta ।
হাসির রোল উঠলো ঘরের মধ্যে,
জয়ন্ত বললো সালা আমি তাই ভাবছি সবাই কি করে এতো ফ্রী মেজাজে আছে, তাহলে কি সবাই মিলে আমার সাথে ফটকিরী করেছে,
আশীষ বললো সালা তোর তো টেনশন এ স্নান, খাওয়া, অফিস যাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেছিলো,
সুরজিৎ বললো দেখছিস দিদি, এরা সবাই মিলে আমার সাথে…
জয়ন্ত বললো April full আমি না, এপ্রিল ফুল তোদের করলাম, কারন Dr Madam Sen যে একসময় DVC র Dr ছিল সেটা তোরা কেউ যানতিস না, আর উনি আমার পাশের quarter এই ছিলেন, আরএখন আমারও খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছেন, গার্গী র ফোন রেখে আমি বুঝে গেছিলাম , যে গার্গী নিশ্চই কোনো কিছু একটা ফটকিরি করতে চাইছে আমার সাথে, কারন আমি সেদিন পাশের ডিভান এ শুধু শুইনি, মুভি দেখতে দেখতে ভোর হয়ে গেছিলো, আমি জেগেই ছিলাম, তাই ভাবলাম ঠিক আছে আমি ও দেখি বিষয় টা কতদূর যেতে পারে , সেই অনুযায়ী প্ল্যান রেডি করে আশীষ, সুরজিৎ কে ফোন করে আসতে বললাম, ওদের দেখালাম আমি খুব টেনশন এ, ওরাও খুব টেনশন খেয়ে গেলো, তারপর অভীক ফোন করলো যখন তখন বুঝলাম প্ল্যান টার সাথে অভীক ও জড়িয়ে, আমি তো অভীক কে চিনি, ও আমাকে ওর বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য অনেক কিছু ফটকিরি করতে পারে, তারপর ইচ্ছা করে ফোন টা
স্পিকার এ দিয়ে দিলাম, তারপর আশীষ কে বললাম গার্গী কে কল করতে, আমি জানতাম গার্গী এই টেনশনটা বাড়ানোর জন্য আশীষ,সুরজিৎ দুজনকেই আসতে বলবে, অথবা আশীষ কে সত্যি কথা বলেও ওকে, সুরজিৎ কে ডেকে নেবে, সেইমতো আমি যথা সময়ে এখানে এসে গেছিলাম, আর ভিতরে ভিতরে হেভী টেনশন করছি এটা দেখাতে চাইছিলাম, আর Dr সেন এর সাথে কথা বলেও আমি বুঝে গেছিলাম যে গার্গী Dr.Sen এর সাথে কোনো কথাই বলেনি,
গার্গী অভীক মিলে আমার সাথে ফটকিরি করতে চাইছে,
তাই Happy happy April full to you all dear বলতে বলতে জয়ন্ত সিগারেটে সুখ টান দিতে লাগল।।
আর বাকিরা এ ওর দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো.
কুড়িয়ে পাওয়া স্মৃতির পাতা
আমি অভিক, facebook করি অনেক দিন ধরেই , প্রতিদিন যে দেখি তা নয়, তবে মাঝে মধ্যে দেখি. Facebook messanger ও বেরিয়েছে , কিন্ত ইনস্টল করা হয়নি. আজ নতুন একটা ফোন কিনে এনেছি, সমস্ত প্রয়োজনীয় apps install করেছি, যেমন Whatsap , facebook, banking apps, ভিডিও প্লেয়ার, trucaller ইত্যাদি ইত্যাদি. নতুন ফোন এ সব শেঠ ও করে নিয়েছি. হঠাৎ কি মনে হল facebook messanger ডাউনলোড করে install করে নিলাম. Messanger খুলতেই একটা নাম চোখে এলো. অবাক হয়ে গেলাম. প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিলো না. এতদিন পর যে আবার যোগাযোগ হতে পারে মিতার সাথে ভাবতেই পারিনি.ভাবছিলাম কি করবো!! Reply করবো কি করবো না !!এতোসতো ভাবতে ভাবতে.. Hi, আমি ভালো আছি. তুমি কেমন আছো?? লিখে পাঠিয়েই দিলাম. সেদিন 4th অক্টোবর 2017 রাত 12টা হবে. প্রায় 16 বছর পর যোগাযোগ হলো, তারপর তো কথাই শেষ হতে চায় না, হাজার কথা, হাজার জিজ্ঞাসা.. কোথায় থাকি?? দাদা রা কেমন আছে?? কবে বিয়ে করেছি ? তোমার বৌ খুব মিষ্টি দেখতে, ফেসবুকে দেখেছি, তোমায় খুব মিস করেছি, অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, বিয়ের পর পর ও তোমায় অনেক বার কল করেছি কথা বলতে পারিনি, একদিনের জন্যও তোমাকে ভুলতে পারিনি,জানি তুমি অনেক রেগে আছো আমার ওপর, please, পারলে ক্ষমা করে দিও.তোমার ফোন নম্বর দাও,কাল ফোন করবো ইত্যাদি ইত্যাদি..
মিতার বিয়ে হয়েছে 2002 এ. ওর একটা দুস্টু মিস্টি ছেলে আছে, ক্লাস সিক্স এ পড়ে.হাসব্যান্ড একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে সার্ভিস করতো, কিছুদিন যাবৎ বাড়িতেই বসে আছে. ও একটা বিউটি কনসালটেন্ট এর কাজ করে, এখন ওর উপার্জনেই সংসার চলে. আমি জানতাম ও নর্থ এ থাকে. এয়ারপোর্ট এর কাছে, কথা বলে জানতে পারলাম ও সাউথ এ চলে এসেছে, আমার পাশের এলাকায় ভাড়া থাকে.ও জানতো না যে আমিও নর্থ থেকে সাউথ এ ফ্লাট কিনে চলে এসেছি. প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিলো না. এটা কিভাবে সম্ভব!!! 2002 এর পর যার সাথে কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি, বারবার চেষ্টা করেছি মন টাকে নিয়ে দূরে, বহু দূরে সরিয়ে রাখতে, সে আজ আমার পাশের এলাকায় !!!যাকে একটা মুহুর্ত না দেখে আমার চলত না, প্রায় 16বছর যার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছিলাম. সে এখন নাকি আমারি পাশের এলাকায় বসত গড়েছে.. পৃথিবীটা সত্যিই গোল.. পরের দিন সকালে কাজে বেরোনোর সময় ও কল করলো, কি বলবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না, ওর গলার আওয়াজ টাও মাথা থেকে হারিয়ে গেছিলো, তারপর আসতে আসতে কথা বলা শুরু হলো, কাজ থেকে ফেরার পথে কল করতো, মাঝে মাঝে সময় পেলে sms ও করতো. একদিন ঠিক করলাম দুজনে কোনো এক কফি শপ এ দেখা করবো, ভিতরে ভিতরে আমি খুব excited হয়ে আছি, চিনতে পারবো কিনা, কেমন দেখতে হয়েছে ওকে, আমি অনেক ছিপছিপে ছিলাম তখন, এখন চেহেরায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে,ও চিনতে পারবে কিনা, এতদিন পর আমার মিতার সাথে দেখা হবে, অপ্রত্যাশিত একটা আশার ইচ্ছাপূরণ হতে চলেছে. নানা রকম কথা মনের মধ্যে ভিড় করছে. সেই মত একদিন ওর অফিস থেকে ফেরার পথে কাছাকাছি এক কফি শপ এ দুজনে মুখোমুখি বসলাম. তারপর দুটো কফি আর একটা চিকেন স্যান্ডউইচ অর্ডার করে দিলাম,কফি শপ টা আমার পূর্ব পরিচিত. ও বললো স্যান্ডউইচ খাবে না, 10 মিনিট এর বেশি বসতেও পারবে না. Hi, Hello কেমন আছো?? এই দিয়ে বেসিক আলাপ শুরু হলো আমাদের(মুখে মৃদু হাসি).দুজন দুজনকে দেখেই চলেছি, এর পর কি বলবো দুজনেই বুঝতে পারছি না, আসতে আসতে মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো,
দুজনেরই চোখ ছলছল,দুজনেই ফিরে গেছি তখন প্রায় তলিয়ে যাওয়া স্মৃতির পাতায়, আসতে আসতে কফি, স্যান্ডউইচ টেবিল এ পৌঁছে গেলো. কফির কাপ এ চুমুক দিতে দিতে, স্মৃতির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কখন যে 1ঘন্টা 10 মিনিট পেরিয়ে গেছে দুজনেই বুঝতে পারিনি. তবে এতো কথার মাঝেও, আমি শুধু কেন র উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছি, সেদিন কেন আমায় না জানিয়ে ও বিয়েতে মত দিল, কোনো সদুত্তর পাইনি, যদিও এখন কেন র উত্তর খুঁজে লাভই বা কি?? তারপর কফি শপ থেকে বেরিয়ে ওকে অটো তে তুলে দিলাম, ও আসছি বলে tata করে বেরিয়ে গেলো, আমি ও কাজ শেষ করে বাড়ি চলে এলাম. আসতে আসতে ভাবলাম আমার বৌ জয়ী কে জানাতে হবে, কিন্তু কিভাবে বলবো!!ও কি ভাববে?? তারপর ভাবলাম যাইহোক জয়ী কে বলতেই হবে.আমরা দুজনে বন্ধুর মতোই থাকি, আমাদের সম্পর্কে দুজনেরই ব্যাক্তিগত স্পেস আছে. বাড়ি ফিরলাম. রাত এ sms এ আবার কথা হলো, ভালোও লাগছে আবার মন ভারাক্রান্ত ও হচ্ছে. শেষে good night বলে ফোন টা বন্ধ করলাম. মন তখন অতীত আর বর্তমান এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, আসতে আসতে পুরানো সুখ স্মৃতি গুলো মনের মধ্যে জেগে উঠছে,তার সাথে কিছু তিক্ততাও ভিড় করছে, যার কারণে এতো বছর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছিলাম.সেকথা না হয় পরেই বলবো কখনো.আপাতত ভালো মুড টা নষ্ট করতে চাই না……..
পরের দিন ঠিক করলাম আজ জয়ী কে সব জানাবো, জয়ী জানতো যে আমার girl friend এর সংখ্যা, কিন্ত details কিছু জানতো না, সেই মতো দুজনেই কাজ থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় এলাম.তারপর জয়ীর কাছে 16 বছর আগের সেই স্মৃতি রোমন্থন করলাম, আমরা বাগুইআটি অশ্বিনীনগর এ ভাড়া থাকতাম. তারপর ওখান থেকে শিফট করে আমরা গ্রীনপার্ক এ ভাড়া নিয়ে আসি.তখন সম্ভবত 2001 হবে. ওখানে পাশেই আমার এক বন্ধু (শুভাশিস )র বাড়ি ছিল সেই সূত্রেই গ্রীনপার্ক এ আসা. আমরা দুজনেই তখন একসাথে CA পড়ছি. আমরা দুই বন্ধু রেগুলার বিকালে সাইকেল এ করে নবদর্শে আড্ডা দিতে যেতাম, জায়গাটা খুব সুন্দর ছিল. ওখান থেকে সূর্যাস্ত বড় সুন্দর লাগতো, রোজ যেতাম মনোরম বাতাস আর সূর্যাস্তের টানে.পড়ন্ত বিকেলের লাজুক রোদ্দুর বড় সুন্দর লাগতো. প্রতিদিন সন্ধে হলে আমাদের বাড়িতে এসে মুড়ি পাঁপড় ভাজা চা খেয়ে সুভাশিষ বাড়ি ফিরত. দাদা, বৌদি, মেজদা র সাথেও খুব আড্ডা দিত. ও আবার শিল্পী মানুষ, গান খুব ভালোবাসে, সহজ সরল ছেলে, চাল চুলো খুব একটা নেই, ওর বাবা মা ভাই ও খুব ভালো, ওর মা তো আমাকে নিজের ছেলের মতোই দেখতো. শুধু একটাই ওর টেনশন ছিল, ওর মাথার ওপরটা আস্তে আস্তে খালি হয়ে যাচ্ছিলো, excecutive rank এর লোকজনের মতো. যত টাকা এর জন্য খরচ করেছে একটা ছোট খাটো ফ্লাট হয়ে যেত. যাইহোক এবার আসল কথায় আসি যেটা সোনার জন্য জয়ী অপেক্ষা করছে. সেই গ্রীনপার্ক, যেখানে আমরা ভাড়া এলাম 2001 এ আমার বন্ধু শুভাশিস এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়. খুব বড় বাড়ি, দুটো বড় বড় ঘর, বাথরুম, রান্নাঘর, বাইরে বিশাল ফাঁকা জায়গা, সান বাঁধানো একটা কল ও আছে বাইরে. প্রচুর ফলের গাছ,নারকেল,আম, জাম, পেয়ারা, জামরুল আরও অনেক কিছু. প্রায় 10 কাটা জমির ওপর বাড়ি.বাড়িওলা ওপরে থাকেন স্বামী স্ত্রী তে. দুজনেই সরকারি চাকুরীজীবি, মেসোমশাই অবসরপ্রাপ্ত, খুব কৃপণ মানুষ,দ্বিপ্রহরে বাজারে যান, কম দামে যা পান তাই নিয়ে আসেন.খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন, বাঞ্ছারামের মত সব আগলে নিয়ে বসে থাকেন, একটা ফল ও কাউকে দেন না.সদা জাগ্রত, ঈগলের মত ওপরের বারান্দা দিয়ে সব কিছু দেখতে থাকেন, কেউ ঢুকলেই কে.. রে.. কে.. রে.. কে..রে… মাসিমা আবার এসব নিয়ে মাথাই ঘামায় না. নিজেরমতো বিন্দাস থাকেন.নিজের বন্ধুদের সাথে আড্ডা পার্টি এসব নিয়েই থাকেন………..
যাইহোক, ওই বাড়িতেই ভাড়া আসে আরও একটি পরিবার, ওনারা স্বামী স্ত্রী দুই ছেলে ও দুই মেয়ে, বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, গুজরাট এ থাকে. ওনারাও আবার ব্রাম্ভণ, দুই ছেলে জমজ, ছোটকা আর বড়কা, দুই মিনিটের ছোট বড়, দেখে বোঝা মুশকিল কে ছোটকা আর কে বড়কা, সুযোগ পেলেই দুজনে মারামারি করে. মেসোমশাই একটা হোটেল এ ম্যানেজার এর কাজ করেন আর মাসিমা বাড়িতেই থাকেন. ছোট মেয়ে মিতা ওনাদের বড় আদরের , গোলাপ ফুলের মতো মিষ্টি দেখতে,ছিপছিপে চেহেরা. সহজ, সরল স্নিগ্ধতা চোখে মুখে লেগে আছে. প্রথম আলাপ তার সাথে তখন সে ক্লাস নাইন. টুকি টাকি শ্রুতি নাটক করে,পড়াশোনায় ফাঁকিবাজ. আর পাঁচ জনের মতোই আলাপ হলো ওর সাথেও, আমি তখন CA পড়ছি, তেঘরিয়া বন্ধু (সুমন্তর ) ফ্লাটে জয়েন্ট স্টাডি করি, আমি,শুভাশিস , সুমন্ত, জয়জিৎ আমরা চার বন্ধু. তেঘরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে মিতার সাথে আড্ডা হত, কারণ কথা বলার মত ওরাই ছিল, ওর বাবা, মা, ভাই, সবাই থাকতো ওর সাথে, নানা বিষয়ে আড্ডা হত, আমার দাদাও সঙ্গ দিত মাঝে মাঝে. কখনো কখনো আমাদের বাড়ির খাবার ওদের বাড়ি যেত, ওদের বাড়ির খাবার আমাদের বাড়ি আসতো.মিতা মাঝে মাঝে chowmin বানাতো, আমার জন্য ও থাকতো, ওদের বাড়ি গিয়েই খেতাম. একদিন ওর বই,খাতা ঘাঁটতে ঘাঁটতে খাতার মধ্যে ওর জন্য একটা কবিতা লিখে দিয়ে ছিলাম, ওর নিজের পছন্দের নাম ছিল সঞ্চিতা, কবিতা টা ছিল “সঞ্চিতা অপরিচিতা, সঞ্চিতা অপরাজিতা, সঞ্চিতা আমার ই মিতা’ মিতা মানে বন্ধু সেটা ভেবেই এটা লিখে ছিলাম, তারপর এলো রাখি পূর্ণিমা, বললাম কি আমায় রাখি পরাবে তো , দেখলাম ও সিরিয়াস হয়ে একটা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো, বুঝলাম বিষয় টা জটিল নিশ্চয়. অনেক অনুনয় বিনয় এর পর দরজা খুললো, ভিতরে গেলাম, বললাম কি হয়েছে?? সিরিয়াস হয়ে গেলে কেন?? রাখি পরাবে না?? অনেক চেষ্টার পর বেরিয়ে এলো এক গোপন তথ্য. ও ভালোবাসে আমায়,খুব ভালোবাসে, তাই রাখি পরাবে না. খুব ভালো কথা, কজন মানুষ এমন সুন্দরী মেয়ের, সুন্দর মনের মেয়ের ভালোবাসা পায়, বললাম ঠিক আছে সে পরে ভেবে দেখা যাবে, আপাতত অভিমানটা কমাও, chowmin বানাও খাবো. কিছুদিন যেতে যেতে আমারও একটা ভালো লাগা শুরু হতে লাগলো. তারপর আসতে আসতে শুরু হলো প্রেম, লোকচক্ষুর অন্তরালে, ভোরবেলা সবার অলক্ষে ঘুম থেকে উঠে আমার শোবার ঘরের জানলায় গিয়ে আমার ঘুম ভাঙাতো, অনেকক্ষণ গল্প করতো জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেতে খেতে, সকালে সবাই ওঠার আগে এই প্রেম পর্বটা চলতো. তারপর সকালে আবার খানিকটা ঘুমিয়ে নিত. বাইরের দিকে কল এ স্নান করতে যেতাম দুপুরে, ও দাঁড়িয়ে থাকতো আমায় পাহারা দেওয়ার জন্য. কারণ উল্টো দিকের বাড়ির মেয়েটা ওই সময় বাইরে বারান্দায় এসে বসতো আমায় দেখার জন্য. বিকালে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতো মিতা, কখন আমি ফিরবো, তারপর ও টিফিন খাবে আমার সাথে, এতো যে কেউ ভালো বাসতে পারে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি, আসতে আসতে আমিও কখন যে ওকে আমার মনের গোপনে ঠাঁই দিয়ে ফেলেছিলাম বুঝতেই পারিনি, আমার মনের সবটুকু দিয়ে.যেখানেই যেতাম, যাই করতাম, মনটা শুধু ওর কাছেই পড়ে থাকতো. সময়টা কেমন স্বপ্নের মত কাটছিলো. কিন্তু কটা স্বপ্ন আর সত্যি হয়, আমারও হয়নি. বদলে গেলো জীবন খাতার পরের স্তবক গুলো, মনের গোপন ভাবনাগুলো মনেই রয়ে গেলো…….
হঠাৎ একদিন ওর বাড়ি গিয়ে শুনলাম, ওর নাকি বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে, বিশাল বড় লোক পরিবার, আমি তো অবাক হয়ে গেলাম, এটা কিভাবে সম্ভব, যে নিজে থেকে আমায় ভালোবেসেছে, আজ সে নিজেই এ বিয়েতে রাজি হয়েছে!!কি বলবো !!কি করবো !!কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, ওকে জিজ্ঞাসা করলাম এটা কেন করলে?? বললো আমার বাবা গরিব, বাবা ঠিক করেছে, বাবার কথা রাখতে আমি রাজি হয়েছি. আমি তখন কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না, চলে আসি ওদের বাড়ি থেকে.সেদিন সারারাত ঘুমাইনি আমি, শুধু কেন-র উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলাম.তাহলে কি আমার বোঝার ভুল ছিল, এটা কি ওর অপরিণত বয়সের শুধুই একটা ভালোলাগা!!কিছুই বুঝতে পারছিলাম না. খুব কষ্ট হচ্ছিলো. কোনোদিন জোর করে কিছু পেতে চাই নি. আর ও যদি নিজে থেকেই এই বিয়েতে রাজি হয় তাহলে আর জোর করার-ই বা কি থাকতে পারে !! যে তরী খানা ভাসিয়েছিলাম খেলার ছলে ছলে, কখন যে তার পাল ছিঁড়েছে দেখতে গেছি ভুলে… ভালোবেসে রেখেছিলাম হাতের পরে হাত, বুঝিনি কখন ছেড়ে গেছে,বদলে গেছে সাথ…পরের দিন সুমন্ত র ওখানে চলে গেলাম, দুদিন থেকে বাড়ি ফিরলাম, আসতে আসতে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে লাগলাম এই দুঃসহ, অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে, কিন্তু চাইলেই কি সম্ভব?? যাকে মনের গোপনে ঢুকিয়ে নিয়েছি তাকে আবার সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা !! মাঝে মাঝে ঘুমের ওষুধ খেতে হত যাতে একটু ঘুমাতে পারি. প্রথম প্রথম পুড়ে যেতাম ভিতরে ভিতরে. আসতে আসতে চোখের জল কে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, একদিন ওদের বাড়ি ঢুকতে যাবো, ওর মা বললো অভিক কিছু মনে কোরো না, কদিন পরে ওর বিয়ে, তুমি এসো না, ভাবলাম এটাও আমার প্রাপ্য ছিল!!!!! আসতে আসতে এলো সেই শুভ দিন, (হ্যাঁ শুভ দিন ই বললাম, কারণ ওর কাছে তো এটা শুভ দিন বটেই), যেদিন হাসতে হাসতে বরের সাথে দিলো শশুর বাড়ি পাড়ি, আমি তখন তেঘরিয়া, সুমন্তর বাড়ি, ঘুমের ওষুধ খাচ্ছি রাতে, তবু ঘুম গিয়েছে ছাড়ি.. বিয়ের পর এসেছে, মাঝে মাঝে দেখা করার, কথা বলার চেষ্টা করেছে, আর আমি ভোলার চেষ্টা করে গেছি, আস্তে আস্তে মন টাকে সরিয়ে নিতে চেয়েছি দূরে, বহুদূরে. তখন মনে মনে শুধু একটা জিনিস ই ভেবেছি, বাচঁরে ওরে বাঁচ, এবার নতুন করে বাঁচ,আমার সকল বাঁধন হতে তোরে মুক্তি দিলাম আজ আশপাশে তোর যারা আছে তাদের নিয়েই বাঁচ, আমার ভালোবাসার বিষের তোকে লাগবেনা কোনো আঁচ… তারপর আমরা মধ্যমগ্রাম এ বাড়ি ভাড়া নিয়ে উঠে যাই. সময়ের সাথে সাথে এটা একটা টুকরো অপূর্ন স্মৃতি হয়েই থেকে গেছে, রাগ,অভিমান সব ঝেড়ে ফেলে এসেছি, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখিনি কখনো. 16বছর পেরিয়ে গেছে,….
এখন জীবন টাও আস্তে আস্তে বদলে গেছে, তবে আমি যে খুব বদলেছি তা নয়,শুধু চেহেরা টা বদলেছে, আমি রয়ে গেছি একই. হঠাৎ করে সেদিন আমি দেখতে পেলাম তারে, ফেসবুক মেসেঞ্জার এ.. যাকে সিন্দুকে ভরে রেখে ছিলাম মনের গভীরে.কেমনে সে বাহির হলো আজ বসন্তে আবিরে, জয়ী কে ওর ছবি দেখলাম, জয়ী তো এক্সসাইটেড সব ঘটনা শুনে, বললো একদিন বাড়িতে নিয়ে আয়.আড্ডা দেবো, বললাম নিয়ে আসবো. তারপর কয়েকদিন আমাদের দেখা হলো, আড্ডা হলো, সম্পর্ক টা কেমন আগের মতো হতে লাগলো, একদিন ওর সাথে দেখা না হলে, কথা না হলে মন টা খালি খালি লাগতে শুরু করলো. তারপর একদিন সময় করে ওকে বাড়িতে নিয়ে এলাম. ও অনেক দোটানায় ছিল আশার ব্যাপারে, জয়ী কি ভাববে কি বলবে. কিন্তু আশার পর সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো, ও অনেকক্ষণ জয়ীর সাথে আড্ডা দিলো, কিছু সুখ দুঃখের কথাও হলো, জয়ী অনেক মেন্টাল সাপোর্ট দিলো ওকে, নিজেকে ভালো রাখার পরামর্শ দিলো.জয়ী ওর মন জয় করে নিলো, কাছের বন্ধু হয়ে গেলো,2008 এ আমার জীবনে এসেছে জয়ী. জয়ী এতো গুণী, এতো পরিণত একটা মেয়ে, যাকে নিয়ে লিখতে গেলে লিখেই যেতে হবে, জয়ী আমার প্রাণ, ও আছে তাই আমি আছি, ও পাশে না থাকলে আমার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে. এটাও জানি, সারা জীবন ও আমার পাশে থাকবে..জয়ী কে নিয়ে এর বেশি আজ নাহয় নাই বললাম, যতই বলি কম পড়বে, জয়ীর বিশালতা ব্যাখ্যা করতে.জয়ী কে নিয়ে নাহয় বলবো একদিন, অন্য কোনো সময়,অন্য কোনোদিন..
Comments are closed.
একটা সম্পর্ক- সেটা বৈধ না অবৈধ!!
তা দিয়ে কি এসে যায়???যে সম্পর্ক বৈবাহিক আইনের দ্বারা স্বীকৃত সেটাই বৈধ??আর যদি তার অন্যথা হয়, তবে সেটা অবৈধ??একটা সম্পর্ক কে শুধু জোর করে,আইনের বেড়ি পড়িয়ে বাঁধা যায়!!ধরা যাক, একটা সম্পর্কে কোনো টান নেই,ভালোবাসা নেই, বিশ্বাস নেই, সততা নেই- সেটা কি আদৌ কোনো সম্পর্ক!তবু ধরে নিলাম,শরীর টাকে আটকে রাখা যায়,কিন্তু মন- তাকে কি সত্যিই কোন বাঁধনে বেঁধে রাখা যায়?? মন তো আর মগজ নয়, যে সে আইনের পরিভাষা বুঝবে আর বৈধ অবৈধের বিভেদ করবে..সে খোঁজে ভালোবাসা, ভরসা,বিশ্বাস, নির্ভরতা যা তার বেঁচে থাকার রসদ lআমার তো মনে হয়, ভালোবাসা ছাড়া সব সম্পর্কই অবৈধ.আর যে সম্পর্ক ভালোবাসা, বিশ্বাস,ভরসা দিয়ে ঘেরা, আমার চোখে সেটাই বৈধ….নাই বা থাকলো তার আইনত বৈধতা, সরকারিসিলমোহর..
আর সমাজ!! সে ও বড় অদ্ভুত,যদি বৈধ সম্পর্কে রোজ অশান্তি লেগে থাকে তারাই বলে, এর চেয়ে,এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাই ভালো,আর যখন বেরিয়ে এসে কোন ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে শুরু করে সুখে, শান্তিতে,যার কোনো বৈধতা নেই আইনত(তাদের ভাষায়) তারাই বলে এ আবার কেমন সম্পর্ক, সমাজ টা নাকি তখন নষ্ট হয়ে গেছে.
তাই সমাজ তার মত বলুক,আমরা আমাদের মত থাকি. সব কিছু ঘাত প্রতিঘাত যখন নিজেকেই সহ্য করতে হয়,তখন বৈধ অবৈধর সিদ্ধান্তটা হোক নাহয় শুধু একান্ত আপনার.
Comments are closed.